Type Here to Get Search Results !

এবার আলাদা হবে উত্তরবঙ্গ! রাজনীতি, নাকি উন্নয়নের সদিচ্ছা



সম্পাদকীয় :-  ২০১৯ সালের পরে ২৪ এর লোকসভা ভোটেও উত্তরবঙ্গ জুড়ে ভালো ফল করেছে বিজেপি। তবে পশ্চিমবঙ্গে সেভাবে  রাজনৈতিক অগ্রগতির দিশা দেখাতে পারিনি বঙ্গ বিজেপি। তৃতীয় মোদি সরকারের বাজেটে বন্যা কবলিত উত্তরবঙ্গের জন্য বরাদ্দ শূন্য। এই বিষয়গুলো যখন উত্তরবঙ্গের সাধারণ মানুষের মনে প্রশ্নের দাগ টানছিল ঠিক সেই সময় এক অদ্ভুত স্বপ্ন নিয়ে হাজির হলেন বঙ্গ বিজেপি সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী ড. সুকান্ত মজুমদার। কি সেই স্বপ্ন? মাননীয় প্রতিমন্ত্রী জানালেন, তিনি দেশের প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করেছেন উত্তরবঙ্গের জেলাগুলোকে যেন উত্তর-পূর্ব ভারতের সঙ্গে যুক্ত করা হয়। অর্থাৎ পূর্ব ভারতের উন্নয়ন মন্ত্রকে উত্তরবঙ্গের অংশকে অন্তর্ভুক্তির দাবি।এই বক্তব্য সামনে আসতে উত্তরবঙ্গের সাধারণ মানুষের মনে আবার এক নতুন প্রশ্নের জন্ম হয়। তবে কি এবার পশ্চিমবঙ্গ থেকে আলাদা হচ্ছে উত্তরবঙ্গ? 


বিগত কয়েক বছর ধরে উত্তরবঙ্গে কিছু বিক্ষিপ্ত শক্তি রয়েছে যারা বিভিন্ন দাবিতে এই উত্তরবঙ্গ কে আলাদা রাজ্য করতে চায়। তাদের মধ্যে এমনও কেউ রয়েছেন যারা উত্তরবঙ্গ কে দুটো তিনটে টুকরো করতে চান। মাননীয় প্রতিমন্ত্রী বক্তব্য শোনার পর সেইসব মানুষদের কিংবা সংগঠনের মনে আবার নতুন করে আশা জাগরণ হতে শুরু করে। ইতিমধ্যেই এই বিষয় নিয়ে কোচবিহারের রাজা দেখা করেছেন দেশের প্রধানমন্ত্রী সঙ্গে। এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমে রাজা বলেন, গ্রেটার কোচবিহার নিয়ে আমরা আশাবাদী, কোচবিহার কোনদিনো বাংলার অংশ ছিল না। এর পাশাপাশি রাজা আরো বলেন আমরা পশ্চিমবঙ্গকে ভাগ করছি না আমরা কেবলমাত্র নিজেদের রাজ্যের দাবী করছি। 


অন্যদিকে বৃহস্পতিবার ছত্তীসগঢ়ের বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত সংসদে বলেন, বাংলা ও বিহারের পাঁচটি জেলা নিয়ে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল গঠন করতে হবে। এর কারণ হিসেবে সাংসদ বলেন, অনুপ্রবেশের ফলে দেশের পাঁচটি জেলার জনবিন্যাস বদলে গিয়েছে। নিশিকান্ত জানান, বিহারের পূর্ণিয়া, আরারিয়া, কাটিহার, কিষাণগঞ্জ এবং পশ্চিমবঙ্গের মালদহ, মুর্শিদাবাদের হিন্দু গ্রামগুলোকে ‘ধ্বংস করা হচ্ছে’। সাংসদের এ-ও দাবি, তাঁর নির্বাচনী এলাকার মধ্যে মধুপুর বিধানসভা এলাকাতেই ২০০-র বেশি বুথে জনসংখ্যা ২০০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। অনেক বুথে মুসলমান জনসংখ্যা বৃদ্ধি হয়েছে ১০০ শতাংশ। তার পরেই তিনি দাবি করেন, ‘‘মালদহ, মুর্শিদাবাদ, আরারিয়া, কৃষ্ণগঞ্জ, কাটিহার এবং সাঁওতাল পরগনা অঞ্চলকে নিয়ে একটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল তৈরি করা হোক। 


 


অর্থাৎ নিশিকান্তের কথায়, উত্তরবঙ্গ থেকে কেবলমাত্র মালদা আর মধ্য বঙ্গ থেকে মুর্শিদাবাদ এই দুটো জেলাকে আলাদা করা হোক। অবশ্য এর কারণ হিসেবে যুক্তি দিয়েছেন সাংসদ। বলেছে অনুপ্রবেশ.... অর্থাৎ সাংসদ হিন্দুদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা এই জেলাগুলোতে যে কমে যাচ্ছে তার বিষয় সচেতন সচেতনতা প্রকাশ করেছে। এই দুই জেলার সাধারণ মানুষের মৌলিক অধিকার নিয়ে তিনি অতটা চিন্তিত নন। যদিও এই বিষয়টি মুর্শিদাবাদের বিধায়ক গৌরীশঙ্কর ঘোষ ২০২২ সালে রাজ্যপালকে চিঠি দিয়েছিলেন। এমনটাই দাবি বিধায়কের। এই বিষয়ে গৌরীশঙ্কর সংবাদ মাধ্যমে জানান, ‘‘২০২২ সালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের কাছে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশের বিষয়টি তুলে ধরেছিলাম। দেশের নিরাপত্তা সুরক্ষিত রাখতে মুর্শিদাবাদ, মালদহ এবং ঝাড়খণ্ডের কয়েকটি জেলা নিয়ে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের দাবি তুলেছিলাম। দল তাতে আস্থা রেখেছে।’’ বিজেপি বিধায়ক আশাবাদী, আগামিদিনে তাঁর দাবিতে সিলমোহর দেবে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। 


পাহাড়ের বিজেপির সাংসদ চাইছেন গোর্খাল্যান্ড, কোচবিহারের রাজা চাইছেন গ্রেটার কোচবিহার, কামতাপুরী সংগঠনের নেতৃত্ব চাইছে কামতাপুর রাজ্য, মুর্শিদাবাদের বিধায়ক চাইছেন মালদা এবং মুর্শিদাবাদ কে ঝাড়খণ্ডের অন্তর্ভুক্ত, বঙ্গ বিজেপি সভাপতি চাইছেন উত্তরবঙ্গে জেলাগুলোকে উত্তর-পূর্ব ভারতের উন্নয়ন মন্ত্রকে অন্তর্ভুক্ত। আবার ঝাড়খণ্ডের সাংসদ চাইছেন মালদা ও মুর্শিদাবাদের বিহারের সঙ্গে অন্ধভক্ত করে আলাদা রাজ্য। কামতাপুরী বিষয়টা বাদ দিয়ে বাকিগুলোর মিল একটাই... এনারা সবাই বিজেপির সাংসদ কিংবা বিধায়ক। দীর্ঘদিন ধরে নানান পরিকাঠামো দিক থেকে উত্তরবঙ্গের মানুষেরা বঞ্চনা শিকার এই কথা যেমন সত্য ঠিক তেমনই একটা ছোট্ট ভূখণ্ড নিয়ে যদি একদলের সাংসদ ও বিধায়কদের মধ্যে তো মতের পার্থক্য থাকে তবে এরা আসলে কি চাইছে তা আপনাদের বুঝে নিতে হবে। 

Tags

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Below Post Ad

Top Side