আপনার নিউজ ডেক্স:- আরজি কর-কাণ্ডে স্বতঃপ্রণোদিত করা মামলার মঙ্গলবার প্রথম শুনানি সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন তিন বিচারপতির বেঞ্চে। প্রথম থেকেই এই নক্কার জনক ঘটনার নিন্দা জানান বিচারপতিরা। প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি জেবি পারদিওয়ালা ও বিচারপতি মনোজ মিশ্রের বেঞ্চে মঙ্গলবার প্রথম শুনানির জন্য উঠে আরজি করের মামলা। সকাল সাড়ে ১০টার কিছু পরে সুপ্রিম কোর্টে বসল প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ। আরজি করের মামলায় শীর্ষ আদালতে মঙ্গলবার কী কী বিষয় উঠে আসে, সে দিকে নজর ছিল গোটা রাজ্যের।
মামলার শুনানিতে প্রধান বিচারপতি বলেন, “এটা নির্দিষ্ট কোনও ঘটনা নয়। আমরা দেশ জুড়ে চিকিৎসকদের নিরাপত্তা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব। চিকিৎসকরা যাতে নিরাপদে কাজ করতে পারেন সেই দিকটি নিশ্চিত করা দরকার।” এর পাশাপাশি প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় প্রশ্ন করেন, মহিলারা নিরাপদে কাজে যেতে না পারলে, সমাজে সবার অধিকার থাকবে কী ভাবে? তাঁর মন্তব্য, “মৃতার নাম ও ছবি ছড়িয়া পড়ার ঘটনায় আমরা খুবই উদ্বিগ্ন। শুনানি শুরুতেই প্রধান বিচারপতি প্রশ্ন করেন, এই হত্যাকাণ্ডকে কেন আত্মহত্যা বলা হয়েছিল এবং মৃতার পরিবারে লোকদের মৃতদেহ দেখতে দেওয়া হয়নি কেন? রাজ্যের তরফে আইনজীবী তখন জানান, এই অভিযোগগুলি সম্পূর্ণ সঠিক নয়। সে কথা শুনে প্রধান বিচারপতি বলেন, “এটি পরিষ্কার যে খুন করা হয়েছে। প্রথমে এফআইআরে কি তা উল্লেখ ছিল? অধ্যক্ষ কী করেছেন?”
আরজি কর হাসপাতালে ১৪ ই আগস্ট রাত্রে ভাঙচুরের ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়েও উষ্মাপ্রকাশ শীর্ষ আদালতের। আরজি করের সামগ্রিক ঘটনায় পুলিশের ভূমিকায় প্রশ্ন তুলে প্রধান বিচারপতি বলেন, “প্রথমে ঠিক ভাবে এফআইআর করা হয়নি। পুলিশ কী করছিল? একটা হাসপাতালের মধ্যে এত বড় ঘটনা ঘটে গেল। পুলিশ কি হাসপাতাল ভাঙচুর করার অনুমতি দিচ্ছিল?” সাত সদস্যের জাতীয় টাস্ক ফোর্স গঠনের নির্দেশ সুপ্রিম কোর্টের। এ প্রসঙ্গে প্রধান বিচারপতির বলেন, “দেশ আবার একটি ধর্ষণ আর খুনের জন্য অপেক্ষা করবে না, যে তার পর পরিবর্তন হবে।”
শুনানি চলাকালীন রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন সলিসিটর জেনারেলের তুষার মেহতা। তিনি আদালতে জানান, “ওই চিকিৎসকের উপর পশুর মতো আচরণ করা হয়েছে। এই ঘটনা নিয়ে রাজনীতি করতে চাই না। কিন্তু মৃতার বাবাকে ৩ ঘণ্টা বসিয়ে রাখা হয়েছিল।” আরজি করে ভাঙচুরের ঘটনা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি। রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তুলে সলিসিটর জেনারেলের যুক্তি, “৫০০ লোকের জমায়েত হলে আমরা বলি ভাল লোক এসেছে। সেখানে সাত হাজার লোক হাসপাতাল ভাঙচুর করল। এটা কি আইন-শৃঙ্খলার নমুনা?”
বিচারপতি জেবি পারদিওয়ালা জানতে চান, কার অভিযোগের ভিত্তিতে এবং কখন প্রথম এফআইআর দায়ের হয়েছিল? জবাবে রাজ্যের আইনজীবী জানান, বেলা ১১টা ৪৫মিনিটে মৃতার বাবার অভিযোগের ভিত্তিতে প্রথম এফআইআর হয়েছিল। পরে অধ্যক্ষ অভিযোগ জানান। এর পরই প্রধান বিচারপতির প্রশ্ন করেন, “সৎকারের জন্য মৃতদেহ কখন পরিবারকে দেওয়া হয়? এফআইআর দায়ের হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই দেহ দিয়ে দিলেন?” আর জি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষের ভূমিকা নিয়ে বার বার প্রশ্ন উঠল সুপ্রিম কোর্টে। প্রধান বিচারপতির প্রশ্ন, “বিকালে ময়নাতদন্তের রিপোর্টে বলা হয় খুন। এফআইআর দায়ের হয়েছিল বেলা ১১টা ৪৫মিনিটে। তার আগে কী করছিলেন অধ্যক্ষ ও কলেজ কর্তৃপক্ষ? ওই সময়ে মৃতার বাবা-মা ছিলেন না। হাসপাতালের দায়িত্ব ছিল এফআইআর দায়ের করা।”