মন্ত্রীর গড়ে মন্ত্রীর হাতে উদ্বোধন করা রাস্তার কাজে দুর্নীতির অভিযোগ স্থানীয়দের, খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস জেলা শাসকের, সুর চড়িয়েছে বিরোধীরা, সাফাই তৃণমূলের, তুঙ্গে রাজনৈতিক তরজা
মালদা;তনুজ জৈন;১৬আগস্ট: মন্ত্রীর গড়ে রাস্তা ঢালাই এর কাজে ব্যবহার হচ্ছে নিম্নমানের সিমেন্ট এবং বালি।মানা হচ্ছে না সিডিউল।যে কোনো সময় ধসে যেতে পারে রাস্তা। ব্যাপক ক্ষোভ জমেছে স্থানীয় ব্যবসায়ী এবং এলাকাবাসীদের মধ্যে। কাঠগড়ায় দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদার। তৃণমূল কাটমানি নিচ্ছে বলেই রাস্তার হাল বেহাল অভিযোগ বিরোধীদের। বিরোধীদের আরো অভিযোগ যেহেতু পঞ্চায়েত হাত ছাড়া হয়েছে তাই তৃণমূলের ইন্ধনে নিম্নমানের রাস্তার কাজ করছে ঠিকাদার। শাস্তি দেওয়া হচ্ছে এলাকাবাসীকে। যদিও বিরোধীদের অভিযোগ মানতে নারাজ তৃণমূল। দুর্নীতি হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে সাফাই তৃণমূল নেতৃত্বের। সমগ্র ঘটনা নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা।মালদা জেলার হরিশ্চন্দ্রপুর ১ নম্বর ব্লকের হরিশ্চন্দ্রপুর সদর এলাকায় হাসপাতালগামী রামবিধু মোড় থেকে মনসা মন্দির পর্যন্ত প্রায় ৪০০ মিটার রাস্তা সংস্কার হচ্ছে ৭৪ লক্ষ টাকা বরাদ্দ অর্থে।প্রায় চার মাস আগে শুরু হয় এই সংস্কারের কাজ।মাঝে পঞ্চায়েত নির্বাচন চলাকালীন কাজ বন্ধ ছিল।ভোটের পর রাস্তার কাজ ফের চালু হতেই ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ। হাসপাতালগামী এই রাস্তা এলাকার সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা। প্রত্যেকদিন প্রায় কয়েক হাজার মানুষ যাতায়াত করে এই রাস্তার উপর দিয়ে। দীর্ঘদিন ধরেই রাস্তার দশা বেহাল ছিল।ভোটের মুখে ঘটা করে রাস্তার শিলান্যাস করে ছিলেন স্থানীয় বিধায়ক তথা রাজ্যের প্রতিমন্ত্রী তাজমুল হোসেন। এলাকাবাসী ভেবেছিল সামনে পঞ্চায়েত ভোট আছে বলেই হয়তো তাদের সমস্যার সমাধান হল। স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি ছিল ভোটের আগে হরিশ্চন্দ্রপুর সদর দখল করতে এটা তাদের মাস্টার স্ট্রোক। যদিও রাস্তার কাজ শুরু হওয়ার পর নির্বাচন ঘোষণা হয়ে যাওয়াই কাজ স্থগিত থাকে।এবার পুনরায় কাজ শুরু হতেই দুর্নীতির অভিযোগের পাহাড় নিয়ে সরব স্থানীয়রা।স্থানীয়দের অভিযোগ সিডিউল টাঙানো হয়নি রাস্তার কাজের। নেই কোন বোর্ড। ১০ মিটার ঢালাইয়ের কথা থাকলেও করা হচ্ছে ৭ মিটার।অত্যন্ত নিম্নমানের বালি,সিমেন্ট এবং পাথর ব্যবহার করা হচ্ছে রাস্তার কাজে।এই ভাবে নিম্নমানের কাজ হলে নবনির্মিত রাস্তা যে কোনো সময় ধসে যেতে পারে বলে আশঙ্কা স্থানীয়দের। অন্যদিকে বিরোধীদের অভিযোগ এই রাস্তার কাজের টাকা বোর্ড গঠনের কাজে ব্যবহার করছে তৃণমূল। যেহেতু হরিশ্চন্দ্রপুর গ্রাম পঞ্চায়েতে তৃণমূল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। বিরোধীরা বোর্ড গঠনের প্রচেষ্টা করছে।তাই একদিকে প্রশাসনকে ব্যবহার করে বোর্ড গঠন স্থগিত করিয়েছে তৃণমূল।অন্যদিকে এইসব রাস্তার কাজের টাকা বোর্ড গঠনের কাজে ব্যবহার করার চেষ্টা করছে তারা। বিজেপির দাবী যেহেতু সদর এলাকার মানুষ প্রত্যাখ্যান করেছে তৃণমূলকে।তাই নিম্নমানের কাজ করিয়ে মানুষকে শাস্তি দিচ্ছে তৃণমূল।
স্থানীয় ব্যবসায়ী নির্মল কেডিয়ার অভিযোগ, রাস্তা সংস্কারের জন্য চার মাস আগে রাস্তা খোড়া হয়েছে। তারপর মাঝে কাজ বন্ধ ছিল। এখন অত্যন্ত ধীর গঠিত হচ্ছে কাজ।রাস্তার এই অবস্থার জন্য চরম ভোগান্তি হচ্ছে মানুষের। হাসপাতালে যেতে গিয়ে রোগীদের সমস্যার মুখে পড়তে হচ্ছে।রাস্তার দুই ধারে যে সব ব্যবসায়ী দোকান রয়েছে তাদের ব্যবসায় মারাত্মক প্রভাব পড়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা পবন দাস জানান, ঠিকাদারের দেখা পাওয়া যাচ্ছে না। রাস্তার পাশে কোন বোর্ড বা সিডিউল টাঙানো নেই। অত্যন্ত নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে কাজ হচ্ছে। এই রাস্তা দুই দিনও টিকবে না।
বিজেপি নেতা রূপেশ আগরওয়াল বলেন, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তৃণমূলের নেতা বা তাদের পরিবারের লোকেরাই ঠিকাদারি করে। রাস্তার কাজে কাটমানি দিতে হয়। তৃণমূলের আমলে যেই কাজই হবে তাতে দুর্নীতি হবে। হরিশ্চন্দ্রপুর ১ নং ব্লকে মানুষ তৃণমূলকে ছুড়ে ফেলে দিয়েছে।
কংগ্রেস নেতা আদিত্য মিশ্রর কটাক্ষ করে বলেন , রাস্তার টাকা বোর্ড গঠনের কাজে ব্যবহার করছে তৃণমূল। ওই টাকা দিয়ে বিরোধীদল ভাঙ্গানোর চেষ্টা করছে।প্রশাসনকে ব্যবহার করছে।
যদিও তৃণমূল নেতা তথা জেলা তৃণমূল -সহ-সভাপতি বাবলা সরকারের সাফাই,"বিরোধীদের কথার কোনো ভিত্তি নেই।রাজনীতি করার জন্য এই অভিযোগ করছে।দুর্নীতি হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।তৃণমূল দুর্নীতি কে প্রশ্রয় দেয় না।
জেলাশাসক নীতিন সিংহানিয়া জানান, সমস্ত ঘটনা খতিয়ে দেখে উপযুক্ত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
ভোটের প্রাক্কালে সাধারণ মানুষের কাছে প্রতিশ্রুতির ডালি নিয়ে হাজির হয় রাজনৈতিক দলের নেতারা। কিন্তু ভোট মিটলেই উধাও হয়ে যায় প্রতিশ্রুতি।যে টুকুও কাজ হয় তার মধ্যে উঠে আসে দুর্নীতির অভিযোগ। স্থানীয়দের দাবি এইভাবে দুর্নীতি করলে কাজ করার কোন প্রয়োজন নেই।