আপনার নিউজ ডেক্স:- দীর্ঘ ৩৪ বছরের বাম আধিপত্যকে সরিয়ে ২০১১ সালে নতুন বাংলার ডাক দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন মমতা। দীর্ঘ ১৩ বছরে রাজ্যে নানান ঘটনা অস্বস্তিতে ফেলেছিল শাসক দলকে। পার্ক স্ট্রিট, কাটোয়া, কামদুনি, মধ্যমগ্রাম, ধূপগুড়ি। ঘটনা ঘটেছে অনেক বারই। এছাড়া নির্বাচনের পূর্বে নারদা কিংবা সারদা নিয়ে বিরোধীদের নিশানায় শাসক দল। তবে ৯ই আগস্ট আরজি করে ঘটনার পরবর্তী সাধারণ জনগণের আন্দোলন এক নতুন মাত্রা নিয়েছে। প্রতিদিন যেন নতুন নতুন অংশের মানুষ শামিল হয়ে যাচ্ছেন প্রতিবাদের তরঙ্গে! আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের ঘটনা কেন এমন জনরোষের জন্ম দিল, সেই প্রশ্নই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে শাসক শিবিরের অন্দরে। ১৪ ই আগস্ট মধ্যরাত্রে মেয়েদের রাত্রি দখল কর্মসূটির পর থেকেই সামাজিক আন্দোলন ক্রমশই রাজনৈতিক আন্দোলনের পরিণত হচ্ছে। আর তাতেই সিঁদুরে মেঘ দেখছে তৃণমূল।
গণ-ক্ষোভের ব্যাখ্যা খুঁজতে গিয়ে নানা মত উঠে আসছে শাসক তৃণমূল কংগ্রেসের অন্দরে। দলের একাংশ মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সুরেই সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহের নেপথ্যে বাংলাদেশের প্রভাব দেখছে। সিপিএম, কংগ্রেস ও বিজেপিকে দোষ দিয়ে মমতা বলেছিলেন, বিরোধীরা ভেবেছে এখানেও বাংলাদেশ করবে! দলের এক পুর-প্রধানের মতে, ‘‘পাশের বাংলাদেশের ঘটনা টাটকা। সেখানে দেখা গিয়েছে, ছাত্র-ছাত্রীদের আন্দোলনের সঙ্গে পা মিলিয়ে রাস্তায় নেমে প্রচুর ভোটে জিতে আসা এবং ক্ষমতাশালী সরকারকেও নামিয়ে দেওয়া যায়। অরাজনৈতিক মানুষ বা রাজনৈতিক শক্তি, সব অংশের উপরেই বাংলাদেশের ওই ঘটনা ছাপ ফেলেছে।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘পুবালি হাওয়ার সঙ্গে ঝিরঝরে বৃষ্টি মিশলে ইলিশ ভাল হয়! এটাও সেই রকম।’’
ইতিমধ্যেই এই ঘটনার জেরে রাজনীতির ময়দানে নেমে পড়েছে সদ্য লোকসভা ভোটে তৃণমূলের কাছে গো-হারা বিরোধীরা। বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ইতিমধ্যেই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদত্যাগ চেয়ে রাজনৈতিক ঘোড়া হাতে শুরু করে দিয়েছে। থেমে নেই পশ্চিমবঙ্গের ভোট রাজনীতিতে ক্রমশ্য শূন্য থেকে শূন্যতরে যাওয়া সিপিএম। দলটির ছাত্র এবং যুব সংগঠনের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যেই এই ঘটনাকে হাতিয়ার করে রাজনৈতিক লড়াই শুরু করে দিয়েছে। ২০০৯ থেকে ২০০১ সালে বামফ্রন্ট জমানার শেষ দিকে একের পর ঘটনায় প্রশাসন যখন কার্যত দিশাহারা, সেই সময়ে সমালোচনা ছিল সিপিএমের গণ-সংগঠন এবং রাজনৈতিক যোগাযোগের চেয়েও প্রশাসন-নির্ভরতায় জোর দিতে গিয়ে সরকারের ভরাডুবি হল। পরিস্থিতি এখন সেই পর্যায়ে না-গেলেও পুলিশ এবং প্রশাসন-নির্ভরতা নিয়ে প্রশ্ন আছে তৃণমূলেও। দলের একাংশের মতে, আরজি কর-কাণ্ডে নিহত চিকিৎসক-তরুণীর বাড়ির এলাকার হাওয়া বুঝতেও পুলিশ-কর্তাদের কাছে বারবার খোঁজ নিয়েছেন দলের নেতারা। সাংগঠনিক বা দলীয় স্তরে পরিস্থিতি মোকাবিলায় জোর দেওয়া হয়নি।
কেবলমাত্র বিরোধীরা নয় তৃণমূলের অন্দরে অনেক নেতা এবং মন্ত্রীরা এই আন্দোলনে যোগ দিয়েছে। তবে পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক পরিস্থিতির সাথে ওপার বাংলা রাজনৈতিক পরিস্থিতির মিল না থাকলেও। বাংলাদেশে যেমন ছাত্র আন্দোলনকে হাতিয়ার করে জামাত এবং বিএনপি শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করেছে তৃণমূলের অন্দরে সেই ভয় কাজ করছেন। তৃণমূলের এক বিধায়কের আরও বক্তব্য, ‘‘ভোটে আমরা জিতেছি ঠিকই। কিন্তু অন্যান্য ঘটনায় ক্ষোভও জমেছিল। যেমন, পুরসভা এলাকা ধরে ধরে রাস্তা থেকে ছোট ছোট দোকানদার, ব্যবসায়ীদের তুলে দেওয়া হয়েছে। এঁরা ক্ষিপ্ত, স্থানীয় ভাবে আমরা জানি। সুযোগ পেলে এই ক্ষোভ সরকারের বিরুদ্ধে বেরিয়ে আসবে। আরজি করের ক্ষেত্রে সেটাও হয়তো একটা কারণ।’’