আপনার নিউজ ডেক্স:- দীর্ঘ ছাত্র আন্দোলনের জেরে উত্তাল হয়েছিল বাংলাদেশ। অবশেষে গণ-আন্দোলনের জেরে প্রধানমন্ত্রিত্ব থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে জীবন বাঁচিয়ে পালিয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর পরবর্তী সময়ে দেশটির দায়িত্ব নেয় সেনা। আন্দোলনকারীদের প্রস্তাবে সায় দিয়ে ৫ আগস্ট দেশটির সেনাপ্রধান ঘোষণা করেন ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেবে বাংলাদেশের। তবে প্রশ্ন ছিল, কি হবে সে সরকারের প্রধান। অবশেষে সামনে এল সেই নাম। আন্দোলনকারীদের প্রস্তাবকে মেনে নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে বাংলাদেশের দায়িত্ব সামলাবেন নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূস। দেশটির গণমাধ্যম সূত্রে এমনটাই খবর।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক পটভূমি পরিবর্তন হতে শুরু করে। দেশজুড়ে চলে হিংসাত্মক ঘটনা। সূত্রের খবর অনুসারে প্রায় ১৫০ টি থানায় অগ্নিসংযোগ করা হয়। আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীদের নির্বিচারে হত্যা চালানো হয় দেশটিতে। এই হিংসার মধ্যেই বিএনপি নেত্রী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার কে মুক্তির আদেশ দেন রাষ্ট্রপতি। এরপর থেকেই বিশ্বজুড়ে গুঞ্জন শুরু হয়ে যায় তবে কি আবার দেশটিতে শাসন চালাবে বিএনপি-জামাত জোট? তবে সেই জল্পনার অবসান ঘটলো। আপাতত বাংলাদেশের গুরু দায়িত্ব ইউনূসের হাতে।
বাংলাদেশ গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা, দেশ জুড়ে বিভিন্ন শাখার মাধ্যমে দেশটির গৌরী সাধারণ মানুষকে ঋণ দিয়ে স্বনির্ভর করার প্রক্রিয়া দীর্ঘদিনের। ইউনূস চেয়েছিলেন সক্রিয় রাজনীতিতে নিজের নাম লেখাতে। তবে আওয়ামীলীগেরব সাথে সম্পর্ক খুব একটা মধুর ছিল না এই নোবেলজয়ী বাঙালির। ব্যাঙ্ক স্থাপনের ভাবনার জন্যই তিনি নোবেল শান্তি পুরস্কার পেয়েছেন। আবার ২০২১ সালে হওয়া টোকিয়ো অলিম্পিক্সে বিশেষ সম্মান অলিম্পিক লরিয়াল পুরস্কার পান ইউনূস।
হাসিনার পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের অনুরাগী ছিলেন ইউনূস। মুক্তিযুদ্ধের সময়ে ‘বাংলাদেশ সিটিজেনস কমিটি’ (বিসিসি) গড়ে পশ্চিম পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যলায়ের অর্থনীতির এই ছাত্র। সেই সময়ে বিসিসি-র প্রচার পুস্তিকার সম্পাদকও হন ইউনূস। মুজিবুরের মৃত্যুর পরে হাসিনার সঙ্গেও একটা সময় পর্যন্ত সুসম্পর্ক ছিল তাঁর। তবে পরবর্তীতে সম্পর্কে তিক্ততা আসে। সাধারণ গরিব মানুষকে ঋণ দিয়ে সর্বস্বান্ত করেছিলেন ইউনুস। এই ভাবনাতেই ইউনূসকে ‘গরিবের রক্তচোষা’ বলতেন হাসিনা। নানা মামলায় জড়িয়ে ব্যাঙ্কের প্রধান পদ থেকে নামিয়েই ক্ষান্ত থাকেননি, জেলেও পাঠাতে চেয়েছিলেন। এমনকি, বাংলাদেশের ‘গর্বের’ পদ্মা সেতু নির্মাণ নিয়ে অন্তর্ঘাতের অভিযোগও তোলা হয় তাঁর বিরুদ্ধে।
ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে আজ হাসিনার ছেড়ে যাওয়া সিংহাসনে অধিষ্ট হতে চলেছে নোবেলজয়ী বাঙালি। বারংবার রাজনীতিতে আসার ইচ্ছে প্রকাশ করলেও সেই পরিসর পাননি ইউনুস। অবশেষে দেশের এই কঠিন পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের দাবীকে সম্মতি জানিয়ে তিনিই প্রধানমন্ত্রী হতে চলেছেন।