আপনার নিউজ ডেক্স:- ছাত্র এবং গণআন্দোলনের ফলে চলতি মাসের ৫ই আগস্ট বাংলাদেশ ক্ষমতাচ্যুত হয় আওয়ামী লীগ সরকার। শেখ হাসিনা এবং তার বোন প্রাণ বাঁচিয়ে সেনাবাহিনীর বিশেষ বিমানে ভারতে আসেন। ভারতে পা রেখে ভারতীয় নিরাপত্তা এবং কূটনৈতিক কর্তাদের সঙ্গে একাধিকবার কথা বলেন বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী। ইতিমধ্যেই কেন্দ্র সরকারের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যত ক্ষণ না তাঁর পরবর্তী আশ্রয়ের ঠিকানা নির্ধারিত হয়, হাসিনা নয়াদিল্লিতেই থাকবেন। ১৯৭১ সালের পুনরাবৃত্তি যেন ভারক্রান্ত করে তুলেছে শেখ হাসিনাকে। ভারতীয় প্রকাশিত গণমাধ্যমের খবর অনুসারে,নয়াদিল্লির অজ্ঞাতবাস থেকে ঘনিষ্ঠ মা হলে জানিয়েছেন, বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতির জন্য আমেরিকার ভূমিকা অন্যতম।
হাসিনা আরও বলেন, আমেরিকা আওয়ামী লীগ সরকারকে 'অন্যায় ভাবে' ক্ষমতাচ্যুত করতে সরাসরি সাহায্য করেছে। বঙ্গোপসাগরে আমেরিকার আধিপত্য তে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন হাসিনা। তবে কি সেন্ট মার্টিন দ্বীপ আমেরিকা কে না দেওয়ার ফল ভোগ করতে হলেও মুজিব কন্যাকে? দেশ ত্যাগ করার সময় জাতীয় উদ্দেশ্যে ভাষণ রেকর্ড করতে চেয়েছিলেন হাসিনা। তবে এই সময়টুকু দেওয়া হয়নি সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে। হাসিনা আরও জানান, বাংলাদেশিরা যেন মৌলবাদীদের হাতে পরিচালিত' না হন।
ভারতীয় প্রথম সারির সংবাদ মাধ্যমের খবর অনুসারে, ভারতে পৌঁছে হাসিনার সঙ্গে যাঁদের কথা হয়েছে, সেই সূত্রে জানানো হয়, যাতে 'লাশের মিছিল' দেখতে না হয়, তাই পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন তিনি। ছাত্রদের মৃতদেহের উপর ক্ষমতা হস্তান্তর হোক তা চাননি বঙ্গবন্ধু কন্যা। চাননি দেশের আরও সম্পদ নষ্ট হোক। তাঁর মতে, সেন্ট মার্টিন দ্বীপের সার্বভৌমত্ব আমেরিকার হাতে তুলে দিয়ে বঙ্গোপসাগরে সে দেশকে ছড়ি ঘোরাতে দিলে হয় তো তিনি ক্ষমতায় থেকে যেতে পারতেন। দেশ ছাড়ার মতো কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে তিনি বাধ্য হয়েছেন বলে জানিয়েছেন হাসিনা। বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেছেন, তিনি আবার নিজের দেশে ফিরে যাবেন। মনে করেন, আওয়ামী লীগ বার বার ঘুরে দাঁড়িয়েছে, আবারও দাঁড়াবে। তাঁর দলের বহু নেতাকে মেরে ফেলা, ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়ার মতো খবরে তিনি যে অত্যন্ত ব্যথিত, জানিয়েছেন সে কথাও।
বঙ্গোপসাগর নিয়ে আমেরিকা ও চীনের সংঘাত দীর্ঘদিনের। এই দুই পরাশক্তি চায় বঙ্গোপসাগরের ক্ষমতা দখল করতে। বাংলাদেশের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে ইতিমধ্যেই চীন অর্থ লগ্নি করেছে। এ বিষয়গুলো লক্ষ্য করে আমেরিকা চাইছিল সেন্ট মার্টিন দ্বীপে এদের আধিপত্য সৃষ্টি করতে। তবে সেই পথেই বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন শেখ হাসিনা। বৈষম্যমূলক ছাত্র আন্দোলন ধীরে ধীরে পরিণত হয় হাসিনার পতনের আন্দোলনে। সূত্রের খবর অনুসারে, হাসিনা যখন দেশ ত্যাগ করে ভারতে আসছিলেন তখন তিনি গণভবনে উপস্থিত সেনা কর্মীদের অনুরোধ করেছিলেন, গণভবনে দরজা যেন সাধারণ মানুষজন উন্মুক্ত করে রাখা হয়।
৫ আগস্ট বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন হয়ে যেমন থাকবে ঠিক তেমনই গণভবন থেকে শুরু করে ওটা দেশে লুটপাট মনে রাখবে বিশ্ব। যে ছাত্র সমাজ যেকোনো দেশের সংস্কার মূলক কার্যকলাপে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। বাংলাদেশের সেই ছাত্র সমাজের হাতেই ছিল নারীর অন্তবাস। ছাত্রদের আন্দোলনে ততক্ষণে মিশে গিয়েছিল বিএনপি এবং জামাতের সক্রিয় কর্মীরা। দেশজুড়ে বিভিন্ন ঐতিহাসিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে চলে অভাবে অগ্নিসংযোগ এবং লুটতরাজ। বাংলাদেশের ছাত্র সমাজের পক্ষ থেকে বলা হয় 'এ নতুন স্বাধীন বাংলাদেশ '। তবে দেশটির জাতীয় সম্পদ থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত যে সম্পদ গুলো খোয়া গিয়েছে তার দ্বায় কি নেবে দেশটি ছাত্র সমাজ? এমনটাই প্রশ্ন আন্তর্জাতিক মহলে।
কোটা আন্দোলন শুরু হওয়ার কিছু আগে এপ্রিল মাসে হাসিনা জাতীয় সংসদে বলেছিলেন, আমেরিকা তাঁর দেশে জমানা পরিবর্তনের চক্রান্ত করছে। বলেছিলেন, ওরা চাইছে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে এমন একটি সরকার তৈরি করতে যাদের কোনও গণতান্ত্রিক অস্তিত্বই নেই। প্রসঙ্গত, এই জমানা পরিবর্তনের পিছনে 'বিদেশি হাতের' কথা উড়িয়ে দিচ্ছে না সাউথ ব্লকও। সম্প্রতি বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে সরকারের ডাকা সর্বদলীয় বৈঠকে বিশেষ করে এই বিষয়টি নিয়ে বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের কাছে জানতে চান লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী। জয়শঙ্কর তাঁকে জানান, সব সম্ভাবনাই খতিয়ে দেখা হচ্ছে এবং কোনও কিছুই উড়িয়ে দেওয়ার মতো নয়। গণমাধ্যমে খবর অনুসারে, হাসিনা ঘনিষ্ঠ আওয়ামী লীগের শীর্ষ কর্তাদের বক্তব্য, গত মে মাসে আমেরিকার দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহ-সচিব ডোনাল্ড লু-এর ঢাকা সফরের সঙ্গে এই ক্ষমতা পরিবর্তনের সম্পর্ক রয়েছে। এই অভিযোগও তাঁরা করছেন, যে লু চিন-বিরোধী কিছু পদক্ষেপ করতে হাসিনার উপর চাপ দিচ্ছিলেন।