সুশোভন সিংহ:- লোকসভা ভোট পরবর্তী সময়ে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় বিগত সাত বছরে বিরল ঘটনার সাক্ষী থাকল বাংলা। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর প্রস্তাব মেনে নিল মমতার সরকার। বাংলা ভাগের দাবির বিরুদ্ধে প্রস্তাব এনে সোমবার বিধানসভায় বিতর্কের উদ্যোগ নিয়েছিল সরকার। সেই তর্কে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও যে অংশ নেবেন তা আগেই থেকেই স্পষ্ট ছিল। বিজেপির বিরুদ্ধে এভাবে কৌশলগত পদক্ষেপের আগে সোমবার বিধানসভায় বিরল ছবি দেখা গেল। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর প্রস্তাব মেনে নিল সরকার। যার অর্থ সরকারের আনা প্রস্তাবে সংশোধন করা হবে।
সোমবার বাংলা ভাগ বিরোধী প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা শুরু হল রাজ্য বিধানসভায়। এদিন প্রস্তাবটি বিধানসভায় পেশ করেন রাজ্যের পরিষদীয় মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। বিধানসভার নাম না করে তিনি আক্রমণ করেন কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী তথা বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারকে। পরে বিধানসভার অধিবেশনে যোগ দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। শাসক এবং বিরোধী বিধায়কদের বাগ্যুদ্ধে বার বার উত্তপ্ত হয় বিধানসভার অধিবেশন।
তবে সব কিছুর মাঝে বিরল চিত্র ধরা পড়লে বিধানসভায়। সোমবার বিতর্ক শুরু হওয়ার আগে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন, “আপনাদের আজকের প্রস্তাব পুরোপুরি রাজনৈতিক। এটা পার্টির লিফলেট হয়ে গেছে। বিজেপির একজন সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী (সুকান্ত মজুমদার) মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটা প্রস্তাব দিয়েছেন যা আদৌ বাংলা ভাগের কথা নয়। তিনি বাংলা ভাগের কথা বলেননি। তিনি তার ব্যাখ্যাও দিয়েছেন”। এর পাশাপাশি শুভেন্দু আরো বলেন, “আমি একটা প্রস্তাব দিচ্ছি। পরিষদীয় মন্ত্রী যখন উত্তর দেবেন তখন বর্তমান প্রস্তাবের বয়ানের কিছুটা পরিবর্তন করুন। আমার প্রস্তাব অখন্ড পশ্চিমবঙ্গ, অবিভক্ত পশ্চিমবঙ্গের উন্নয়ন নিয়ে প্রস্তাব আনুন। আমরা সহমত পোষণ করব”।
বিরোধী দলনেতা বক্তব্যের পরে বিধানসভায় বক্তব্য দিতে ওঠেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মমতা বলেন, “পশ্চিমবঙ্গ এক থাকবে। আমি শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়কে বলব, স্পিকার বিরোধী দলনেতার প্রস্তাব যুক্ত করা হোক। সংগঠিত প্রস্তাব এলে তা গ্রহণ করা হোক।” একই সঙ্গে তাঁর সংযোজন, “আমি যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামোয় বিশ্বাসী। কেন্দ্র যেমন সহযোগিতা করবে, তেমনই রাজ্য কেন্দ্রকে সহযোগিতা করবে।”
এর পরই পরিষদীয় মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় উঠে গিয়ে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর পাশে গিয়ে বসেন। সাধারণত বিরোধীরা কোনও সংশোধন প্রস্তাব আনলে সরকার তা গ্রহণ করে না। তবে সরকার সেই সংশোধন প্রস্তাব নিজেরাই এনে পুরনো প্রস্তাবে পরিবর্তন করে নেন। এক্ষেত্রেও তেমনই ঘটে। তারপর আজকের মুখ্যমন্ত্রী শোভনদেবের উদ্দেশে বলেন, “শুভেন্দু যেটা বলছে যুক্ত করে নিন”।