Type Here to Get Search Results !

বাংলাদেশের মেহেরপুরে পাটে এবার ব্যাপক লোকসান কৃষকদের

পাটে এবার ব্যাপক লোকসান মেহেরপুর জেলা কৃষকদের


বাংলাদেশ:-
ক্রেতা না থাকায় কৃষকেরা পাইকারদের কাছে কম দামেই পাট বিক্রি করতে একপ্রকার বাধ্য হচ্ছেন।

মেহেরপুরে নতুন পাটের দরপতনে কৃষকেরা লোকসানের মুখে পড়েছেন। শ্রমিক ও পানির অভাবে জাগ দিতে না পারায় অনেক কৃষকের পাট এখনো খেতেই রয়ে গেছে। মাঠ থেকে পাটের পরিবহন খরচ, জাগ দিতে পানির ভাড়া ও আঁশ ছাড়ানোর যে খরচ, তা পাট বিক্রি করে উঠে আসছে না। এবার পাট চাষ করে প্রতি বিঘা জমিতে প্রায় চার হাজার টাকা করে লোকসান করছেন চাষিরা।

লোকসানের ভয়ে অনেক ব্যবসায়ী পাট কেনা বন্ধ করে দিয়েছেন। ক্রেতা না থাকায় কৃষকেরা পাইকারদের কাছে কম দামেই পাট বিক্রি করতে একপ্রকার বাধ্য হচ্ছেন।

কয়েক বছরের তুলনায় এ বছর পাটের দাম কম। পানি না থাকায় পাট জাগ দেওয়া অনেক কষ্টের ব্যাপার। পাট গলার ফাঁস হয়ে যাচ্ছে।

আক্কাস আলী, ভাটপাড়া গ্রামের পাটচাষি

সদর উপজেলার কুলবাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা দিন মোহাম্মদ চলতি মৌসুমে চার বিঘা ধানি জমিতে পাটের চাষ করেছেন। তিনি বলেন, গত বছর ২ হাজার ২০০ টাকা মণ দরে পাট বিক্রি করেছিলেন। সব খরচ মিটিয়ে কিছু টাকা হাতে ছিল। এবারে পাটের দাম একেবারে কম। মাত্র ১ হাজার ২০০ টাকা দরে বিক্রি করতে হচ্ছে। এতে জমি থেকে পাট কেটে জাগ দিতে শ্রমিক খরচ কুলিয়ে ওঠা সম্ভব হচ্ছে না। অনেকে পাট এখনো কাটতে পারেননি। তাঁদের পাট জমিতেই শুকিয়ে গেছে।

গাংনীর সাহারবাটি মোকামের আড়তদার শাহেদ মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, গুদামে এখনো গত বছরের পাট মজুত রয়েছে চার হাজার মণ। সরকারিভাবে পাট রপ্তানি করা না গেলে ব্যবসায়ীরা একেবারে মোটা অঙ্কের লোকসানে পড়বেন। পাট ব্যবসায়ী নুরুল হুদা বলেন, ব্যবসায়ীরা অনেকে গত বছরের পাটই বিক্রি করতে পারেননি। তার ওপর এবার বড় লোকসানের ভয়ে অনেকে পাট কেনা বন্ধ করে দিয়েছেন।

জেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২ বছর ২১ হাজার হেক্টর জমিতে জমিতে পাট চাষ হয়েছিল। জেলায় এ বছর পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ২১ হাজার হেক্টর। চলতি মৌসুমে পাটের আবাদ বেড়েছে, জেলায় প্রায় ২২ হাজার ৭৩৪ হেক্টর জমিতে পাট চাষ করা হয়েছে। সর্বত্র বিজেআরআই তোষা জাতের পাট চাষ হয়েছে। প্রতি বিঘায় ফলন হয়েছে ১২ থেকে ১৪ মণ পর্যন্ত।

কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এক মৌসুমে প্রতি বিঘা জমির বর্গা খরচ ৫ হাজার টাকা। নিড়ানি থেকে পাট কাটা পর্যন্ত শ্রমিক মজুরি ৪০০ টাকা করে। প্রতি বিঘা জমিতে নিড়ানির জন্য ৪ জন শ্রমিকের খরচ ১৬০০ টাকা। নিড়ানির এক মাস পর ‘বাছ দেওয়া’ (ভালো পাটগাছ রেখে ছোট-দুর্বল পাটগাছ উপড়ে ফেলা) কাজে ২ জন শ্রমিকের খরচ ৮০০ টাকা। এক বিঘা জমির পাট কাটতে ৪ জন শ্রমিকের খরচ ১৬০০ টাকা।

পরে পাট জাগ দেওয়া থেকে শুকানো পর্যন্ত শ্রমিক মজুরি বেশি হয়, প্রতি শ্রমিক দৈনিক ৬০০ টাকা করে। পাট জাগ দেওয়ার জন্য ৩ জন শ্রমিকের খরচ ১৮০০ টাকা। ১৫-২০ দিন পর পাটের আঁশ ছাড়ানোর জন্য ৬ জন শ্রমিকের খরচ ৩ হাজার ৬০০ টাকা। পরের ২ দিনে শুকানোর জন্য শ্রমিক খরচ ২ হাজার ৪০০ টাকা। এর মধ্যে প্রতি বিঘা জমিতে টিএসপি, ইউরিয়া ও পটাশ সার বাবদ খরচ ১৫৫০ টাকা, কীটনাশক খরচ ৩০০ টাকা। প্রতি বিঘা জমির পাট কাটার পর বহন খরচ (ট্রলি ভাড়া) ২ হাজার টাকা।

এতে দেখা যাচ্ছে, প্রতি বিঘায় পাট আবাদে গড়ে খরচ হয়েছে ২০ হাজার ৬৫০ টাকা। বিঘাপ্রতি গড়ে ১৩ মণ পাট উৎপাদন এবং বাজারে প্রতি মণ পাটের দাম ১৩০০ টাকা ধরে প্রতি বিঘা জমিতে পাট চাষ করে আয় ১৬ হাজার ৯০০ টাকা। এতে প্রতি বিঘায় চাষিদের লোকসান হচ্ছে ৩ হাজার ৭৫০ টাকা। এর বাইরে পাট জাগ দিতে পানিও কিনতে হয়েছে অনেক কৃষককে। সেই খরচ যোগ করলে লোকসানের অঙ্ক আরও বড় দাঁড়াচ্ছে।

মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক শংকর কুমার মজুমদার পাটের দরপতনের ব্যাপারে বলেন, কৃষকেরা পাট চাষে চরম হতাশ হয়ে পড়ছেন। সরকারিভাবে পাটের দাম নির্ধারণ করা গেলে চাষিদের জন্য মঙ্গল হতো।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Below Post Ad

Top Side