(‘মুখ্যমন্ত্রী নয়, আপনাদের দিদি হিসেবে এসেছি)
সুশোভন সিংহ:- স্বাস্থ্য ভবনে জুনিয়র ডাক্তারদের ধর্নাস্থলে আচমকা হাজির হলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শনিবার তাঁদের সঙ্গে দেখা করেন মমতা। ছিলেন রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমারও। এদিন মুখ্যমন্ত্রী ধর্নামঞ্চে পৌঁছতেই স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে আন্দোলনের মঞ্চ। কার্যত অনুরোধ করেন চিকিৎসকদের শান্ত করেন তিনি। আন্দোলনকারীদের পাঁচ দফা দাবি মেনে নেওয়ার কথা না বললেও, খতিয়ে দেখার আশ্বাস দেন। একই সঙ্গে জুনিয়র ডাক্তারদের কাজে ফেরার অনুরোধ করেন তিনি। মমতা বলেন, 'মুখ্যমন্ত্রী নয়,আপনাদের দিদি হিসেবে এসেছি।
আন্দোলন মঞ্চে গিয়ে মমতা চিকিৎসকদের উদ্দেশে বলেন, “মনে রাখবেন সুপ্রিম কোর্টে কেস চলছে। ১৭ তারিখে ডেট আছে। আমি চাই না আপনাদের কোনও ক্ষতি হোক।” ডাক্তারদের ধর্নামঞ্চের সামনে গিয়ে সাংবাদিক বৈঠকের মাধ্যমে তাঁদের উদ্দেশে বার্তা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘আমার নিরাপত্তাজনিত নানা নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তা সত্ত্বেও আমি নিজে ছুটে এসেছি। আপনাদের আন্দোলনকে কুর্নিশ জানাচ্ছি। আমি আপনাদের ব্যথা বুঝি। আমিও ছাত্র আন্দোলন থেকে উঠে এসেছি।’’
শুক্রবার রাত থেকে কলকাতায় বৃষ্টি চলছে। আলিপুর আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, নিম্নচাপের কারণে শনিবার দিনভর ঝড়বৃষ্টি হবে। আবহাওয়া নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন মমতা। তিনি বলেন, ‘‘শুক্রবার সারা রাত ঝড়জল হয়েছে। আপনারা যে ভাবে বসে আছেন, আমার কষ্ট হচ্ছে। গত ৩৪ দিন ধরে আমিও রাতের পর রাত ঘুমোইনি। কারণ, আপনারা রাস্তায় থাকলে আমাকেও পাহারাদার হিসাবে জেগে থাকতে হয়।’’ এদিন মুখ্যমন্ত্রী বারবার জুনিয়র ডাক্তারদের কাজে ফেরার অনুরোধ করেন।
ঘটনা উল্লেখ্য, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ ছিল, চিকিৎসকদের কাজে ফিরতে হবে। কাজে যোগ দিলে, তাঁদের বিরুদ্ধে যাতে কোনও ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, সেটাও নিশ্চিত করেছিলেন প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়। কাজে ফেরার জন্য সময় বেঁধে দিয়েছিলেন তিনি। এরপর নবান্ন থেকে একাধিক চিঠি দেওয়া হয় আন্দোলনকারীদের। বৈঠকে যেতে বলা হলেও ৫টি শর্ত দেন তাঁরা। পরে আন্দোলনকারীদের শর্ত মেনে ৩০ জনকে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়। কিন্তু লাইভ স্ট্রিমিং-এর দাবিতে অনড় ছিলেন আন্দোলনকারীরা। প্রায় ২ ঘণ্টা অপেক্ষা করে অপেক্ষা করে চলে যান মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায়।
আগামী মঙ্গলবার শুনানিতে এই সব বিষয়গুলি রাজ্য ব্যবহার করতে পারে বলে মনে করছে আইনজীবী মহল। শুধু তাই নয়, কাজে যোগ না দেওয়া সত্ত্বেও যে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, সেই যুক্তিও থাকবে রাজ্য সরকারের হাতে। সর্বোপরি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে আন্দোলনের মঞ্চে গিয়ে মমতা বলে দিয়েছেন, এটাই তাঁর শেষ চেষ্টা। এরপরই যাওয়ার সময় মমতা মনে করিয়ে দেন সুপ্রিম শুনানির কথা।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘যদি আপনারা কাজে ফিরতে চান, আমি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, আপনাদের দাবিগুলি সহানুভূতির সঙ্গে বিবেচনা করব। আমি একা সরকার চালাই না। মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব, ডিজি সকলের সঙ্গে আমি আপনাদের দাবি নিয়ে আলোচনা করব। যদি কেউ দোষী হন, শাস্তি পাবেন। সিবিআইকে অনুরোধ করব, দ্রুত তদন্ত শেষ করুন। দোষীদের ফাঁসি হোক। কেউ দোষী থাকলে আমি নিশ্চয়ই ব্যবস্থা নেব। এটুকু বলতেই আমি এসেছি।’’
সব মেডিক্যাল কলেজের রোগী কল্যাণ সমিতি ভেঙে নতুন করে তৈরি করা হবে, জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। ডাক্তারদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘‘আপনারা আমাদের ঘরের ভাইবোন। আমি কোনও অবিচার হতে দেব না। সব হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতি নতুন করে তৈরি করা হবে। তাতে জুনিয়র ডাক্তার, সিনিয়র ডাক্তার, নার্স, পুলিশ সকলের প্রতিনিধি থাকবে। আমি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আরজি করের রোগী কল্যাণ সমিতি আমি ভেঙে দিলাম। নতুন করে তা তৈরি করা হবে।’’ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘যদি সত্যি কেউ দোষী হয়, তারা শাস্তি পাবে। কেউ আমার বন্ধু বা শত্রু নয়। যাঁদের আমার বন্ধু বলছেন, আমি তাঁদের চিনিই না। প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাঁরা এসেছেন। আমি সাধ্যমতো পদক্ষেপের চেষ্টা করব। আপনারা কাজে ফিরুন।