Type Here to Get Search Results !

বাংলাদেশের মেহেরপুরে ছাগল পালনে তিন বিধবা নারী সফল ভূমিকা পালন করছেন



আপনার নিউজ;বাংলাদেশ:- মেহেরপুরে ছাগল পালনে তিন বিধবা নারী সফল ভূমিকা পালন করছে। তাদের এই উদ্যোগকে আরো ত্বরান্বিত করতে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক ফরহাদ হোসেন গাভী কিনে দেওয়ার প্রতিশ্রম্নতি দেন।

এ ব্যাপারে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ফতেপুর গ্রামের সংগ্রামি তিন নারীর জীবন সংগ্রামের কথা শুনেছি। ওই তিন নারীর বিষয়ে খোজ খবর নিতে বলেছি। এসব সংগ্রামী নারীদের জন্য সরকার সহায়তা করছে। তাদের গাভি কিনে দেওয়া প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। শুধু ওই তিন নারী নয় অন্যরাও আগ্রহী হলে তাদেরও প্রকল্পভ’ক্ত করা হবে। মুলকথা পরিবর্তন আনতে হবে আমাদের মানসিকতায়, কারণ মনে জোর আর প্রবল ইচ্ছেশক্তি থাকলে কোনো কিছুই অসম্ভব নয়। যা এই তিন নারীর আছে।

মেহেরপুর শহর থেকে তিন কিলোমিটার দুরে সদর উপজেলার ফতেপুর গ্রাম। গ্রামের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে একপাল ছাগল নিয়ে ছুটে চলেছেন উজির আলীর স্ত্রী নসিরন খাতুন। স্বামীর মৃত্যুর পর সন্তানকে নিয়ে কূলহারা নছিরন পড়ে যান মহা সংকটে। জীবনের এই সংকটময় মূহুর্তেও সে কারও কাছে হাত পাতেননি। নিজের প্রচেষ্টায় ঘুরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন। সেই সিদ্ধান্ত থেকে সমাজের শত বাঁধা বিপত্তিকে মাড়িয়ে ছাগল নিয়ে নেমে পড়েন মাঠে। মাঠে মাঠে ছাগল চরিয়ে পালন করে নিজের ও দুই সন্তানের খাওয়া—দাওয়া ও পড়াশোনার খরচ চালাচ্ছেন। পুরুষ শাসিত সমাজে নছিরন দেখিয়ে দিলেন কিভাবে জীবনের চাকা সচল রাখতে হয়। নছিরনের মতো একই গ্রামের আরও দুই সংগ্রামী নারী হচ্ছেন মৃত এজারুল ইসলামের স্ত্রী বারেজান খাতুন ও চান্দু মিয়ার স্ত্রী আয়মা জান ।

দারিদ্র হলেও ভিক্ষা না করা ও অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ না করে সম্মানের সাথে বেঁচে থাকার অবলম্বন খুজছিলেন তারা। তিন জন মিলে সিধান্ত গ্রহণ করেন ছাগল পালন করবেন। কিন্তু বিপত্তি বাধে মেয়ে মানুষ কিভাবে মাঠে ছাগল চরাতে যাবে। সমাজ তাদের কিভাবে দেখবে। মানুষ কটুক্তি করবে কিনা। এসব চিন্তা ভাবনা মাথায় নিয়ে তিন জনেই সিধান্ত গ্রহণ করেন, তারা এক সাথে ছাগল কিনবেন, একসাথে মাঠে যাবেন, ছাগল চরাবেন, সামাজিক বিপত্তি একসাথেই মোকাবেলা করবেন। কেউ কটুক্তি করলে একসাথে প্রতিবাদ করবেন। তিন জন পৃথকভাবে তাদের পছন্দ ও সামর্থ অনুযায়ী প্রতিজন দু’টি করে বাচ্চা দেয় এমন মোট ছয়টি ছাগল ক্রয় করেন। ছাগল ক্রয়ের পরদিন থেকে ওই নারীরা সংসারের প্রাথমিক কাজকর্ম শেষ করে সকাল নয়টার দিকে ছাগল চরাতে মাঠে নেমে পড়েন।

তিনজনই তাদের ছাগল একসাথে এক দলেই মাঠে চরানো শুরু করেন। সকাল নয়টা থেকে সাড়ে এগার বা বারটা পর্যন্ত এদিকে বিকেল সাড়ে তিনটা থেকে পাঁচটা, সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত মাঠে সড়কের ধারে বা পতিত জমিতে দল বেঁধে ছাগল চরাতে দেখা যায় তাদের। তিন জনের হাতে লাঠি, মনে স্বাবলম্বি হবার প্রত্যয়। গত পাঁচ বছর হচ্ছে তারা ছাগল পালন করছেন। এখন প্রতিজনের ১৫ থেকে ২০টি করে ছাগল। ছাগল বিক্রি করে কেউ কেউ কিনেছেন গরুও। গরুর দুধ বিক্রি করছেন। সন্তানদের লেখাপাড়া শেখাচ্ছেন। সংসারের ব্যয়ও মেটাচ্ছেন। মানুষ এখন তাদের খুব সম্মান করে। প্রশংসা করে। তাদের এই কাজে সকলেই উৎসাহ দিয়েছে, সহযোগিতা করেছে। ওই তিন নারী এখন গ্রামের অনান্য নারীদের জন্য অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। সরকারীভাবে কোন সহযোগীতা পেলে ছাগলের খামার করার প্রত্যয় তাদের।

নসিরন খাতুন জানান, অভাব আছে বলে ভিক্ষা করা, লোকের নিকট থেকে চেয়ে খাওয়া লজ্জার। বরং কাজ করে খাওয়া অনেক সম্মানের। খুব কষ্ট করে সংসারে স্বচ্ছলতা এনেছি। দুবেলা ভালমত খেতে পরতে পারছি এখন। ছেলে মেয়েদের ভাল পোষাক বই খাতা কিনে দিতে পারছি। এটাই আমাদের অনেক বড় প্রাপ্তি।

বারেজান খাতুন বলেন, আমার স্বামী মারা যাবার পর তিন ছেলে মেয়ে নিয়ে আমি একেবারেই অসহাই হয়ে পড়েছিলাম। আমার স্বামী শ্রমজীবি হলেও তিনি আমার অবলম্বন ছিলেন। এই সময় সংসারের হাল ধরতে সিদ্ধান্ত নিয়ে ছাগল পালন শুরু করি। এভাবে কষ্ট করে আমরা এখন ভাল আছি।

আয়মা জানের অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়ে সাদিয়া জানায়, আমার মা ভিষণ কষ্ট করে আমাদের লেখাপাড় শেখাচ্ছেন। আমাদের কোন অভাব বুঝতে দেননা। পড়ালেখার ফাঁকে ফাঁকে মায়ের কাজে সহযোগিতা করতে চাইলে মা বলেন তোমরা আগে লেখাপড়া করো, চাকরি অথবা ব্যাবসা করো। মানুষের মত মানুষ হও। তারপরেও যতটুকু পারি মায়ের কাজে সহায়তা করি। আমরাও বড় হয়ে মায়ের সেবা করতে চায়।

ফতেপুর সরকারী প্রাইমারী বিদ্যালয়ের শিক্ষক শফিউদ্দিন বলেন, গ্রামের ছাগল পালনকারী তিন নারী এখন অনেক নারীর কাজের অনুপ্রেরণা। সকলেই তাদের প্রশংসা করে। এভাবে নারীরা নানা কাজে এগিয়ে আসলে আমাদের দেশ অর্থনৈতীক ভাবে যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, সেই দৌড়ে গ্রামীন প্রান্তিক নারীরা শহরের চাইতে আরো এগিয়ে যেত।

মেহেরপুর সদর উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা মোঃ মনিরুজ্জামান বলেন, সমবায়ের মাধ্যমে মেহেরপুর জেলায় সাড়ে ছয়শত গরু ক্রয় করে দেওয়া হয়েছে। গরু গুলো কিষাণ—কিষাণিদের বাড়িতে বেড়ে উঠছে। গাভি গরুতে দুধ দিচ্ছে। প্রতিটি গরু একেকটি পরিবারের স্বাবলম্বি হবার অবলম্বন হয়ে গেছে। ফতেপুর গ্রামের ছাগল পালনকরা ওই তিন নারী আবেদন করলে তাদেরও গরু কিনে দেওয়া হবে। জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ সাইদুর রহমান বলেন, ফতেপুর গ্রামের ওই নারীদের ছাগলের কোন অসুখ হলে প্রাণি সম্পদ অফিসে নিয়ে আসেন। আমরা আমাদের সাধ্য মত তাদের সেবা দেবার চেষ্টা করে থাকি। যেহেতু ছাগলগুলো মাঠে চরিয়ে লালন পালন করে সেই কারনে ওই ছাগলগুলোর অসুখ বিসুখ কম হয়। সময়মত ভ্যাকসিন দিয়ে দেবার কারনে তেমন কোন সমস্য হয়না তাদের।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Below Post Ad

Top Side