পল্লবী সান্যাল, কলকাতা : ছাত্র সমাজের নবান্ন অভিযানকে আগেই বেআইনির তকমা দেগে দিয়েছিল পুলিশ। ছাত্র সমাজের এই আন্দোলন আসলে আরএসএসের-বিজেপির,সামাজিক মাধ্যমে এমনটাও লিখতে দেখা গিয়েছে অনেককে। তবে,সব বাধা-বিতর্ককে ধোপে টিকতে না দিয়ে পূর্ব পরিকল্পনামত পথে নেমে পড়ে ছাত্র সমাজ। মঙ্গলবার সব রং মিশে গেল নবান্ন অভিযানে । ‘দফা এক ,দাবি এক ,মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ’-এই স্লোগান তুলে নারী পুরুষ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে রাজপথে নামে নবান্ন ঘেরাওয়ের লক্ষ্য নিয়ে । পুলিশের শত বাধা উপেক্ষা করে নবান্ন এলাকায় ঢুকে পড়তে সক্ষম হন আন্দোলনকারীরা । বিকেলে আন্দোলনকারীদের আটক করে পুলিশ ।
এদিকে ,পুলিশের মারমুখী প্রতিরোধের পাল্টা ছাত্র সমাজের পাশে দাঁড়িয়ে বুধবার ১২ ঘন্টার বাংলা বন্ধের ঘোষণা করলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। মঙ্গলের নবান্ন অভিযান রুখতে সোমবার থেকেই প্রশাসনের তৎপরতা চোখে পড়ে । হাওড়া ব্রিজ থেকে সাঁতরাগাছি,যে পথ দিয়ে মিছিল আসবে ,সব পথ অবরুদ্ধ করা হয় ব্যারিকেডে। উচ্চ পদস্থ পুলিশ কর্তারাও পরিস্থিতি সামলাতে পথে নামেন। ছ হাজারের বেশি পুলিশ মোতায়েন করা হয় জায়গায় জায়গায় । সেই সঙ্গে ড্রোনের নজরদারি তো ছিলই। অথচ কোনো ঘটনা ঘটে গেলে বা রোজ দিন নিরাপত্তা সুরক্ষার স্বার্থে এত পুলিশ কর্মীকে একসঙ্গে অ্যাক্টিভা থাকতে দেখা গিয়েছে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকেই ।
একদিকে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে জলকামান, কাঁদানে গ্যাসের সেল ফাটানো থেকে লাঠি চার্জ এর আশ্রয় নেয় পুলিশ।অন্যদিকে জাতীয় পতাকা হাতে বাধার মুখেও নিজেদের আন্দোলনে ,দাবিতে অনড় থাকে আন্দোলনকারীরা। ক্ষিপ্ত জনতা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট পাটকেল ছুঁড়তে শুরু করলে ঘটে যায় রক্তারক্তি কাণ্ড। পুলিশের কাঁদানে গ্যাসের সেল ফাটানো থেকে লাঠি চার্জে জখম হন আন্দোলনকারীদের অনেকেই। সব মিলিয়ে সকাল থেকে নবান্ন অভিযানকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছিল তুঙ্গে । বেলা যত গড়িয়েছে রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় কলকাতা ও হাওড়া । যেভাবে মানুষ পথে নেমেছে তাতে বাংলা দেশের পরিস্থিতির কথা স্মরণ করাচ্ছেন রাজনৈতিক মহলের একাংশ। তবে কি বাংলাদেশের পথেই বাংলা? উঠছে প্রশ্ন ।
ইতিমধ্যেই বাংলায় রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করা থেকে পুনরায় নির্বাচনের দাবি তুলেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী । বামেরা এই আন্দোলন থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে রাখলেও বিজেপির পূর্ণ সমর্থন রয়েছে ছাত্র সমাজের এই নবান্ন অভিযানে । ছাত্ররা শান্তিপূর্ণভাবে মিছিল করছিল।পুলিশ কেন তাদের ওপর লাঠি চালালো? কেন টিয়ার গ্যাসের সেল ফাটালো? মঙ্গলবার বিকেলে সাংবাদিক সম্মেলন করে পুলিশের ভূমিকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার । ঘটনার প্রতিবাদে আগামীকাল সকাল ৬ টা থেকে সন্ধে ৬ টা পর্যন্ত বাংলা বনধের ঘোষণা করেছেন । যদিও অতীতে বহুবার বিরোধীরা বনধ পালনের ডাক দিলেও শাসক বনধ সমর্থন করে না বলেই স্পষ্টতই জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । আগামীকাল বিজেপির ডাকা বাংলা বনধ কতটা সফল হয় সেটাও দেখার।