সম্পাদকীয়; আপনার নিউজ:- দীর্ঘ ১৫ বছরের ক্ষমতার অবসান। বৈষম্যমূলক ছাত্র আন্দোলন পরবর্তীতে রূপ নেয় জঙ্গি আন্দোলনের। দেশটির সুপ্রিম কোর্ট কোটার সংস্করনের পক্ষে রায় দেওয়ার পরে আবার রাজপথে নামেন বিক্ষোভকারীরা তখনই আন্তর্জাতিক মহলের বুঝতে আর সমস্যা হয়নি যে, এটা কেবলমাত্র ছাত্র আন্দোলন নয় এর পেছনে রয়েছে বড়সড় চক্রান্ত। ছাত্রদের ঢাল করে কোন এক বিশেষ শক্তি বাংলাদেশে সরকার পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিল। অবশেষে ৫ ই আগস্ট সে স্বপ্নপূরণ হলো। ছাত্র-ছাত্রীদের আড়ালে বিশেষ কোনো এক শক্তি গোটা দেশজুড়ে চালালো ধ্বংসলীলা। আর এই ধ্বংসলীলায় সর্ব প্রথমে আঘাত আনা হলো দেশটির সংখ্যালঘুদের ওপরে। নির্বিচারে সংখ্যালঘুদের বাড়ি ঘরে লাগানো হলো আগুন। তবে প্রশ্ন শক্তিশালী হাসিনার পতনের পেছনে কারণ কি একমাত্র ছাত্র আন্দোলন? নাকি এর পেছনে রয়েছে পড়াশোনা কোন চক্রান্ত।
কোন দেশের রাজনৈতিক হিংসা সামাজিক পথ পরিবর্তনে সর্বদা অগ্রণী ভূমিকা পালন করে এসেছে দেশের ছাত্রমহল। শুরুর দিকে অনেকটা সেই রকমই মনে হচ্ছিল। তবে ধীরে ধীরে প্রকাশ্যে আসলো আসল রহস্য। শেখ হাসিনা দেশ ছাড়তেই বাংলাদেশী সেনা নিজেদের রূপ দেখাতে শুরু করেদিয়েছিল। সেনার সামনে গণভবনে চলল গণ লুটপাট। আসবোসপত্র থেকে শুরু করে, ছাগল, গরু, হাঁস, মুরগি এমনকি মহিলাদের অন্তর্বাসও লুটপাট করা হয় আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে। কোন সভ্য দেশের ছাত্র সমাজ এই কাজ করতে পারে না। বাংলাদেশের ছাত্ররাও এই কাজ করেনি। সমাজ মাধ্যম কিংবা দেশটির গণমাধ্যমের চিত্র অনুযায়ী। লুণ্ঠনকারী বেশিরভাগ ছিলেন দেশটির অশিক্ষিত এবং শ্রমিক মহলের জনগণ। যাদের খুব সহজেই বোকা বানানো যায় কিছু অর্থ কিংবা ধর্মীয় কথা দিয়ে।
সেনা দায়িত্ব নিলেও গত দুই দিন ধরে দেশটির প্রশাসনিক ভবন গুলোতে অবাধে চলছে গন লুণ্ঠন। পিটিয়ে কিংবা পুড়িয়ে মেরে ফেলা হচ্ছে দেশটিতে পুলিশদের। পৈচাশিক আনন্দে সর্ব প্রথমে নির্দ্বিধায় হামলা করা হয় সংখ্যালঘুদের উপরে। অন্যদিকে সামাজিক মাধ্যমে সংখ্যালঘুদের ধর্মীয় স্থান এবং বাড়ি পাহারা দেওয়ার চিত্র তুলে ধরা হয় দেশটির ছাত্র সমাজ মহল থেকে। তবে সত্যি ঘটনাটা হলো এই আন্দোলনের কন্ট্রোল আর ছাত্রদের হাতে নেই। এই আন্দোলনের রাশ এখন জামাত ও বিএনপির হাতে। তবে কি দেশে জামাতকে নিষিদ্ধ করাই কাল হলো হাসিনার হাসিনার জন্য? আসলে না, কেবলমাত্র জামাতকে নিষিদ্ধ করার জন্যই এত বড় ফল দিতে হয়নি হাসিনাকে। এর পিছনে রয়েছে আরো অনেক কারণ।
সাধারণ জনগণ থেকে একক কর্তৃত্বের শাসনে শেখ হাসিনার সরকার সম্পূর্ণভাবে জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল। পশ্চিমা বিশ্বকে শত্রু বানিয়ে শেষ পর্যায়ে ভূরাজনীতিতেও প্রায় একা হয়ে পড়েছিলেন তিনি। হাসিনা দেশ ছাড়তেই গিরগিটির মত পোশাক পরিবর্তন করে দেশটির কিছু গণমাধ্যম হাসিনার বিরুদ্ধে কথা বলতে শুরু করেছে এখন। কারণ তারা ভালোমতো বুঝে গেছে দেশের পরবর্তী রাশ কাদের হাতে। দেশটির গণমাধ্যমের খবর অনুসারে দেশের ভেতরে আওয়ামী লীগ একা হয়ে পড়েছিল। দীর্ঘ শাসনে সবাইকে খেপিয়ে তুলেছিলেন শেখ হাসিনা। তাঁর সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে দুর্নীতি, অর্থ পাচার, ও অর্থনীতির মন্দা পরিস্থিতিতে মানুষের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছিল। আর রাজনৈতিক দিক থেকে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪–দলীয় জোটের বাইরে অন্য সব দল সরকারবিরোধী অবস্থানে চলে যায়। এর ফলে শেখ হাসিনা রাজনৈতিক দিক থেকেও একা হয়ে পড়েন। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনেও সেটা স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
অন্যদিকে ভূরাজনীতিতে শেখ হাসিনার সরকার ভারতের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পরপর তিনটি বিতর্কিত নির্বাচন করেও টিকে থাকে। এই আলোচনা চলছিল অনেক দিন ধরে। সরকার চীনের সঙ্গেও একটা সম্পর্ক রেখে চলছিল। গত জুলাই মাসেই ৭ তারিখ থেকে দুই দিন চীন সফর করেছিলেন শেখ হাসিনা। সর্বশেষ সেই সফরে অবশ্য ভালো ফল হয়নি। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েন চলছিল অনেক দিন ধরে। বিভিন্ন সময় শেখ হাসিনাসহ তাঁর নেতারা যুক্তরাষ্ট্রের কড়া সমালোচনা করেছেন। সর্বশেষ গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরেও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েন বেড়ে যায়। যুক্তরাষ্ট্র সহ পশ্চীমা দেশগুলো চেয়েছিল বাংলাদেশের ক্ষমতার পরিবর্তন হোক। তাইতো ছাত্র আন্দোলনকে কাজে লাগিয়ে শত শত মৃতদেহের উপর ধবধবে সাদা 'মার্কিন'কাপড় জড়াতে বাধ্য হল মুজিবের বাংলাদেশ।