Type Here to Get Search Results !

Agitation in Bangladesh: উত্তাল বাংলাদেশ, সংরক্ষণ বিরোধী বিক্ষোভে নিহত অন্তত ১৯!


আপনার নিউজ ডেক্স :- প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশ অগ্নিগর্ভ। ছাত্র আন্দোলনে উত্তাল দেশটি। বৃহস্পতিবার দিনভর ঢাকা-সহ দেশের নানা প্রান্ত উত্তপ্ত থেকেছে আন্দোলনে। পুলিশের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। গোটা দেশে এই সংক্রান্ত সংঘর্ষে অন্তত ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে সে দেশের সংবাদমাধ্যম ‘প্রথম আলো’। তাঁদের মধ্যে কারও গুলির আঘাতে, কারও ধারালো অস্ত্রের কোপে মৃত্যু হয়েছে। শুধু রাজধানী ঢাকাতেই মৃত্যু হয়েছে অন্তত ১১ জনের। মৃতদের মধ্যে অধিকাংশই পড়ুয়া। বয়স ৩০-এর নীচে। একাদশ শ্রেণির এক ছাত্রেরও মৃত্যু হয়েছে বৃহস্পতিবার।


দেশটির রাজধানী থেকে শুরু হওয়া সরকারি চাকরিতে সংরক্ষণ বাতিলের দাবিতে আন্দোলন বাংলাদেশ জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে। পুলিশ এবং আওয়ামী লিগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষ চলছে ছাত্রছাত্রীদের। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ নির্বিচারে শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি চালিয়েছে বলে অভিযোগ। অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের তরফ থেকে পুলিশ প্রশাসনের উপরও হামলা করা হয়। এই বিষয়ে দেশটির শেখ হাসিনা সরকার বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, তারা বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে নীতিগত ভাবে সহমত। তাঁদের সঙ্গে আলোচনায় বসতেও চেয়েছেন দেশের আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।


বাংলাদেশের এই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক চাপানউতরও চলছে। সরকারের নীতির বিরোধিতা করে এবং পুলিশের আচরণের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন বিরোধী নেতৃত্ব। অন্য দিকে, শাসকদল আওয়ামী লিগের অভিযোগ, পড়ুয়াদের আন্দোলনকে হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করছে বিএনপি-জামাত। তাই এই আন্দোলন শুধু ছাত্র আন্দোলনের পর্যায়ে আর নেই। শাসকদলের নেতা-কর্মীদের রাস্তায় নেমে পরিস্থিতি মোকাবিলা করার পরামর্শ দিয়েছেন দেশের সড়ক পরিবহণ এবং সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।


এর পাশাপাশি দেশটির শাসক দলের একাংশে মনে করছেন, স্বাধীন ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশকে মৌলবাদী বাংলাদেশ তৈরি করতে চাইছে কিছু স্বার্থান্বেষী মানুষ। আড়াল থেকে এই মানুষগুলোই ছাত্র-ছাত্রীদের খেপিয়ে তুলছে। সামাজিক মাধ্যম গুলোকে কাজে লাগিয়ে এই আন্দোলনের পরিধি গোটা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। দেশটির রাজধানী ঢাকায় বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে মেট্রো পরিষেবা। জনস্বার্থের কথা মাথায় রেখেই এই সিদ্ধান্ত, জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। দেশ জুড়ে ইন্টারনেট ব্যবস্থাতেও অশান্তির প্রভাব পড়েছে। ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক জানিয়ে দিয়েছেন, সমাজমাধ্যম ব্যবহার করে কিছু মানুষের গুজব এবং অপপ্রচার রুখতে এবং জাতীয় সুরক্ষার কথা মাথায় রেখে ইন্টারনেটে রাশ টানা হয়েছে। তবে ইন্টারনেট পরিষেবা একেবারে বন্ধ করে দেওয়া হয়নি। বিভিন্ন অংশে তা ধীর গতিতে চলছে।


২০১৮ সালেও একই বিষয়ে আন্দোলনে উত্তাল হয়ে উঠেছিল দেশটি। সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে সে দেশে মোট ৫৬ শতাংশ আসন সংরক্ষিত ছিল এবং ৪৪ শতাংশ আসন সাধারণের জন্য নির্ধারিত ছিল। এই ৫৬ শতাংশের মধ্যে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের স্বজনদের জন্য ৩০ শতাংশ, নারীদের জন্য ১০ শতাংশ, বিভিন্ন জেলার জন্য ১০ শতাংশ, জনজাতিদের জন্য ৫ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধীদের জন্য ১ শতাংশ সংরক্ষিত পদ ছিল। ২০১৮ সালে সংরক্ষণ বিরোধী আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ায় প্রধানমন্ত্রী হাসিনা নির্দেশ জারি করে মুক্তিযোদ্ধার স্বজনদের জন্য ৩০ শতাংশ, নারীদের জন্য ১০ শতাংশ এবং জেলা খাতে ১০ শতাংশ সংরক্ষণ বাতিল করে দেন। রাখা হয় শুধু জনজাতিদের ৫ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধীদের ১ শতাংশ সংরক্ষণ। তখনকার মতো আন্দোলনে ইতি টানেন ছাত্রেরা। পরে সাত জন মুক্তিযোদ্ধার স্বজন ২০১৮-র সংরক্ষণ বাতিলের নির্দেশনামার বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করে ২০২১-এ হাই কোর্টে যান। গত ৫ জুন হাই কোর্ট রায় দেয়, হাসিনা সরকারের নির্দেশ অবৈধ। নির্দেশনামা বাতিলের অর্থ ফের আগের মতো সংরক্ষণ ফিরে আসা। তার প্রতিবাদেই ফের আন্দোলনে নামেন ছাত্ররা। তাঁরা দাবি করেন, স্থায়ী ভাবে সরকারি নিয়োগ থেকে সব ধরনের কোটা ব্যবস্থা বাতিল করতে হবে। হাসিনা সরকার হাই কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আবেদন করেছে। রবিবার সেই মামলার শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে।


দেশটির গণমাধ্যমের পরিসংখ্যান অনুসারে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে বৃহস্পতিবার চার জনের দেহ আনা হয়। তাঁদের মধ্যে কারও ছররা গুলির আঘাতে, কারও ধারালো অস্ত্রের কোপে মৃত্যু হয়েছে। কারও মাথায় রয়েছে আঘাতের চিহ্ন। মৃতদের মধ্যে রয়েছেন হাসান মেহেদী, তিনি পেশায় সাংবাদিক। ছররা গুলির আঘাতে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া, ৩০ বছরের ওয়াসিম (মাথায় আঘাত), আনুমানিক ২০ থেকে ২২ বছর বয়সি ব্যবসায়ী নাজমুল (ধারালো অস্ত্রের কোপ) এবং ২০ বছরের মহম্মদের (ছররা গুলি) মৃত্যু হয়েছে। নরসিংদীতে ১৫ বছরের তাহমিদ তামিম, ২২ বছরের ইমন মিঞার মৃত্যু হয়েছে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে। চট্টগ্রামের হিংসায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয়েছে ১৮ বছর বয়সি মহম্মদ ইমাদের, তিনি উচ্চ মাধ্যমিকের ছাত্র। মৃত্যু হয়েছে ২২ বছরের আরও এক যুবকের, যাঁর পরিচয় জানা যায়নি। নিহতদের মধ্যে ১৩ জনই ঢাকার।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Below Post Ad

Top Side